চলুন জেনে নেই
পবিত্রারোপিণী একাদশী মাহাত্ম্য এবং কেনো সবারই পালন করা উচিৎ?
পবিত্রারোপণী একাদশী মাহাত্ম্য —
আজ শ্রী শ্রী পবিত্রারোপিনী একাদশী
তিথী । সকলে একাদশী মাহাত্ম পাঠ করুন কারণ --এই ব্রত মাহাত্ম্য যিনি পাঠ বা শ্রবণ করবেন তিনি সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হবেন এবং পুত্রসুখ ভোগ করে অবশেষে দিব্যধাম প্রাপ্ত হবেন।
একাদশী পালনের শাস্ত্রীয় নিয়ম এবং পারণ মন্ত্র
![]() |
পবিত্রারোপণী একাদশী মাহাত্ম্য |
একদিন মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন —হে প্রভু!
শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি তা কৃপা করে আমাকে বলুন।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন-হে মহারাজ! এখন আমি সেই
পবিত্র ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি, মনোযোগ দিয়ে তা শ্রবণ করুন। যা শোনামাত্রই বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়।
প্রাচীন কালে দ্বাপর যুগের
শুরুতে মহিজীৎ নামে এক বিখ্যাত রাজা ছিলেন। তিনি মাহিস্মতি নগরে রাজত্ব করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে তার মনে বিন্দুমাত্র সুখ-শান্তি ছিল না। কেননা তিনি ছিলেন অপুত্রক।
‘পুত্রহীনের ইহলোক পরলোক কোথাও সুখ হয় না’- এইরূপ চিন্তা করতে করতে বহুদিন কেটে গেল। কিন্তু তবুও পুত্রমুখ দর্শনে রাজা বঞ্চিতই রইলেন। নিজেকে অত্যন্ত দুর্ভগা মনে করে রাজা চিন্তাগ্রস্থ হলেন। প্রজাদের সামনে গিয়ে বলতে লাগলেন- হে প্রজাবৃন্দ! তোমরা শোন। আমি এই
জন্মে তো কোন পাপকাজ করিনি, অন্যায়ভাবে আমার রাজকোষ বৃদ্ধি করিনি, ব্রাহ্মণ বা দেবতাদের সম্পদ কখনও গ্রহণ করিনি উপরন্তু
প্রজাদেরকে পুত্রের মতো পালন করেছি, ধর্ম অনুযায়ী পৃথিবী শাসন করেছি। দুষ্টদের যথানুরূপ দন্ড দিয়েছি, সজ্জন ব্যক্তিদের যথাযোগ্য সম্মান করতেও কখনও অবহেলা করিনি। তাই হে ব্রাহ্মণগণ, এই প্রকার ধর্মপথ অবলম্বন করা সত্ত্বেও কেন আমার পুত্র লাভ হল না, তা আপনারা কৃপা করে অনুসন্ধান করুন। রাজার এই প্রকার কাতর উক্তি শ্রবণে ব্যথিত রাজভক্ত
পুরোহিত ব্রাহ্মণগণ রাজার মঙ্গলের জন্য গভীর বনে ত্রিকালজ্ঞ মুনিঋষির কাছে যেতে মনস্থ করলেন। বনের মধ্যে ঋষিদের আশ্রমসকল দেখতে দেখতে তারা এক মুনিরসন্ধান পেলেন। তিনি দীর্ঘায়ু, নীরোগ, নিরাহারে ঘোর তপস্যায় মগ্ন
ছিলেন। সর্বশাস্ত্র বিশারদ ধর্মতত্ত্বজ্ঞ ও ত্রিকালজ্ঞ সেই মহামুনি লোমশ নামে পরিচিত। ব্রহ্মার এক কল্প অতিবাহিত হলে মুনিবরের গায়ের একটি লোম পরিত্যাক্ত হোত। এই কারণে এই মহামুনির নাম লোমশ। তাকে দেখে সকলেই ধন্য হলেন। তারা পরস্পর বলতে লাগলেন যে, আমাদের বহু জন্মের সৌভাগ্যের ফলে আজ আমরা এই মুনিবরের সাক্ষাৎ লাভ করলাম। তারপর ঋষিবর তাদের সম্বোধন করে বরলেন- কি কারণে আপনারা এখানে এসেছেন এবং কেনই বা আমার এত প্রশংসা করছেন, তা স্পষ্ট করে বলুন। আপনাদের যাতে মঙ্গল হয়, আমি নিশ্চয়ই তার চেষ্টা করব। ব্রাহ্মণেরা বললেন- হে ঋষিবর! আমরা যে উদ্দেশ্যে এখানে এসেছি আপনি তা কৃপা করে শুনুন। এ পৃথিবীতে আপনার মতো শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আর কোথাও নেই। মহিজীৎ নামে এক রাজা নিঃসন্তান হওয়ায় অতি দুঃখে দিনযাপন করছে। আমরা তার প্রজা, তিনি আমাদেরকে পুত্রের মতো পালন করেন। কিন্তু তিনি পুত্রহীন বলে আমরাও সবাই মর্মাহত। তার দু:খ দূর করতে আমরা এই বনে প্রবেশ করেছি।
হে ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ! রাজা যাতে পুত্রের মুখ দর্শন করতে পারেন, কৃপা করে তার কোন উপায় আমাদের বলুন। তাদের কথা শুনে মুনিবর ধ্যানমগ্ন হলেন। কিছু সময় পরে রাজার পূর্বজন্মবৃত্তান্ত বলতে লাগলেন।
ৠষি বললেন, এই রাজা পূর্বজন্মে এক
দরিদ্র বৈশ্য ছিলেন। একবার তিনি একটি অন্যায় কার্য করে ফেলেন। ব্যবসা করবার জন্য তিনি এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াত
করতেন। এক সময় জৈষ্ঠ্য মাসে শুক্লপক্ষের
দশমীর দিনে কোথাও যাওয়ার পথে তিনি অত্যন্ত তৃষ্ণার্থ হয়ে পড়েন। গ্রাম প্রান্তে একটি জলাশয়
তিনি দেখতে পান। সেখানে জলপানের জন্য যান।
একটি গাভী ও তার বাছুর সেখানে জলপান করছিল। তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে তিনি নিজেই
জলপান করতে লাগলেন। এই পাপকর্মের
ফলে তিনি পুত্রসুখে বঞ্চিত হয়েছেন।
কিন্তু পূর্বজন্মের কোন পুণ্যের ফলে তিনি এইরকম নিষ্কণ্টক রাজ্য লাভ করেছেন। হে মুনিবর! শাস্ত্রে আছে যে পুণ্য দ্বারা পাপক্ষয় হয়। তাই আপনি এমন একটি পুণ্যব্রতের উপদেশ করুন যাতে তার পারব্ধ পাপ দূর হয় এবং আপনার অনুগ্রহে তিনি পুত্রসন্তান লাভ করতে পারেন।
লোমশ মুনি বললেন- শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের
পবিত্রারোপণী একাদশী ব্রত অভিষ্ট ফল প্রদান করে। আপনারা যথাবিধি তা সকলে পালন করুন। লোমশ মুনির উপদেশ শুনে আনন্দ চিত্তে গৃহে প্রত্যাবর্তন করে তাঁরা রাজাকে সে সকল কথা জানালেন। তারপর সকলে মিলে মুনির নির্দেশ অনুসারে ব্রত পালন করলেন। তাদের সকলের পুণ্যফল রাজাকে প্রদান করলেন। সেই পুণ্য প্রভাবে রাজমহিষী গর্ভবতী হলেন। উপযুক্ত সময়ে বলিষ্ঠ, সর্বাঙ্গসুন্দর এক পুত্রসন্তানের জন্ম দান করলেন।
একাদশী পালনের শাস্ত্রীয় নিয়ম এবং পারণ মন্ত্র
বর্ণিত হয়েছে। এই ব্রত মাহাত্ম্য যিনি পাঠ বা শ্রবণ করবেন তিনি সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হবেন এবং পুত্রসুখ ভোগ করে অবশেষে দিব্যধাম প্রাপ্ত হবেন। ওঁ নমো ভাগবতে বাসুদেবায়।।
জয় রাধামাধব| জয় জগন্নাথ|
তথ্যসূত্র—
ভক্তি বেদান্ত বুক ট্রাস্ট / শ্রীধাম মায়াপুর
শ্যামরূপ দাস ব্রহ্মচারী
Tags: পবিত্রারোপণী একাদশী মাহাত্ম্য , পবিত্রারোপণী একাদশী, শ্রাবণ মাসের একাদশী, একাদশী মাহাত্ম্য, ভবিষোত্তর পুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা,
You Might Also Like :
2. ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথি -এ বছর কত তারিখে জন্মাষ্টমী উদযাপন হবে?
3. সত্যি কি হযরত মুহাম্মদ সনাতন ধর্মের কল্কি অবতার?
4. বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর? এর কি শাস্ত্রীয় প্রমাণ আছে?
5. Google Adsense Approval Tips 2022 | How to get google adsense approval fast
6. How To Create Payoneer Account | Payoneer $25 Bonus