সত্যি কি হযরত মুহাম্মদ সনাতন ধর্মের কল্কি অবতার?

কল্কি অবতার কি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু (নবী) ?

হযরত মুহাম্মদ (সা:) কিছুতেই কল্কি অবতার হতে পারেন না কারণ শাস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ভগবান কল্কি অবতীর্ণ হবার পর পৃথিবীতে সত্যযুগের সূচনা হবে; কিন্তু এখন তো কলিযুগ চলছে ।

༻ভক্তের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ༻꧂

আজকের তারিখে অনেকেই এমন একজন ব্যাক্তিকে (হজরত মুহাম্মদ সা:) কল্কি অবতার বলে প্রচার করছেন, যিনি আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিলেন। কিন্তু শ্রীমদ্ভাগবতে তো বলা হয়েছে~ 

যদাবতীর্ণো ভগবান্ কল্কির্ধর্মপতির্হরিঃ

কৃতং ভবিষ্যতি তদা প্রজাসূতিশ্চ সাত্ত্বিকী৷৷

অর্থাৎ, ধর্মের রক্ষক ভগবান শ্রীহরি যখন কল্কি রূপে অবতীর্ণ হবেন তখন সত্য যুগের সূচনা হবে এবং প্রজারা সব বংশপরম্পরাক্রমে সত্ত্বগুণ সম্পন্ন হয়ে ওঠবে।

তাহলে প্রশ্ন, জাকির নায়েকের মতে কল্কি অবতার (হযরত মুহাম্মদ সাঃ) যদি আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তবে কি বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে সত্য যুগ চলছে?

অবশ্য অনেকে এমন দাবীও করেন যে এখন নাকি পৃথিবীতে সত্য যুগই চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, চারিদিকে এই যে মারামারি, হানাহানি, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি, ধর্ষণ, লুন্ঠন, জখম.. যা কিছু চলছে আারকি,এগুলোই কি সত্য যুগের লক্ষ্ণণ? কখনোই না! 

সত্য যুগের বৈশিষ্ট্য এবং ভগবান কল্কির অবতীর্ণ হবার পরবর্তীকালীন পৃথিবীর প্রেক্ষাপট সম্বন্ধে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে সনাতন শাস্ত্র সমুহের পাতায় পাতায়। 

আজকের আলোচনায় সেই বর্ণনাই আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো যাতে এই বিষয়টা একেবারে পরিস্কার হয়ে যায় যে ভগবান কল্কি এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে অবতীর্ণ হননি বা আজকের তারিখে যাঁকে কল্কি অবতার বলে প্রচার করা হচ্ছে তিনি কোনোভাবেই কল্কি অবতার হতে পারেন না।

শ্রীমদ্ভাগবতের দ্বাদশ স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১৯ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী ---

অষ্টসিদ্ধিময় ঐশ্বর্যে গুণান্বিত সেই জগতপতি দেবদত্ত নামক দ্রুতগামী অশ্বের উপর আসিন থেকে তরবারি হস্তে অসাধুদের দমন করবেন।


শ্রীমদ্ভাগবতের দ্বাদশ স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ২০ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী ---

তাঁর জ্যোতির্ময় অঙ্গের প্রতি রোমকূপ থেকে তেজরাশি বিছুরিত হবে। দ্রুতগামী অশ্বারূঢ় শ্রীভগবান সর্বত্র দুষ্ট দমনে বিচরণশীল থাকবেন ও নরপতি রূপে পরিচিত সকল দস্যুদের সংহার করবেন।


 তার পরবর্তী ২১ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী --

সে সময়ে ভগবান কল্কির দ্বারা দস্যু দমনকার্য্য সমাপনে গ্রামে-গঞ্জে ও নগরে নিবাসকারী সমস্ত প্রজাদের হৃদয়ে পবিত্র ভাবের অনুভূতি আসবে। কারণ, ভগবান কল্কির অঙ্গের অঙ্গরাগ স্পর্শপুত পবিত্র বায়ু প্রজাদের স্পর্শ দান করে পবিত্র করে দেবে। এইভাবে শ্রীভগবানের শ্রীবিগ্রহের দিব্য গন্ধ প্রাপ্ত হয়ে প্রজারা সকলেই ধন্য হবেন।


তার পরবর্তী ২২ নং শ্লোকে বলা হয়েছে ---

তাঁদের হৃদয় মন্দির পবিত্র হলে সেখানে সত্য বিগ্রহ ভগবান বাসুদেব (অর্থাৎ ভগবান কল্কি) বিরাজমান থাকবেন। যার ফলে তাঁদের বংশধরগণ আগের মতোই বলবান ও সক্ষম দেহধারী হয়ে ওঠবেন।


তার পরবর্তী ২৩ নং শ্লোকেই বলা ‌হয়েছে --- 

যদাবতীর্ণো ভগবান্ কল্কির্ধর্মপতির্হরিঃ

কৃতং ভবিষ্যতি তদা প্রজাসূতিশ্চ সাত্ত্বিকী৷৷


অর্থাৎ, ধর্মের রক্ষক ভগবান শ্রীহরি যখন ভগবান কল্কি রূপে অবতীর্ণ হবেন তখন সত্য যুগের সূচনা হবে এবং প্রজারা সব বংশপরম্পরাক্রমে সত্ত্বগুণ সম্পন্ন হয়ে ওঠবে।


শ্রীঅগ্নিপুরাণেও ১৬নং অধ্যায়ের ১০নং শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ---

ভগবান হরি কল্কি রূপ ত্যাগ করে যখন বৈকুণ্ঠে গমন করবেন তখন পুনরায় সত্য যুগের সূচনা হবে। 


শ্রীবিষ্ণুপুরাণের ২৪নং অধ্যায়ের বর্ণনা অনুযায়ী ---

ভগবান কল্কি তাঁর দুর্দমনীয় প্রতাপের দ্বারা তিনি সকল ম্লেচ্ছ ও পাপকার্যে প্রবৃত্তদের সংহার করবেন এবং পুনরায় পৃথিবীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠান করবেন। যেসকল মানুষ কলি যুগের শেষেও বর্তমান থাকবেন তাঁরা জাগরিত হবে এবং তাঁরা স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ হবে। যাঁরা এযুগ পরিবর্তন কালে তাঁদের গুণের প্রভাবে টিকে থাকবে তাঁরাই হবে ভবিষ্যতের বীজস্বরূপ। তাঁরা এমন এক জাতির জন্ম দেবে যাঁরা পূর্ণরূপে সত্য যুগের বিধি-নিষেধ সমূহ অনুশীলন করবে।


শ্রীকল্কিপুরাণের তৃতীয় অংশের বর্ণনা অনুযায়ী ---

এইভাবে পৃথিবীতে সত্য যুগ প্রতিষ্ঠিত হলে রাজাগণ দিনরাত কল্কির নাম জপ ও কল্কির শ্রীমূর্তি চিন্তা করবেন। তখন ভূমন্ডল মধ্যে কোনো প্রজাই অধার্মিক, অল্পায়ু, দরিদ্র, পাষণ্ড ও কপটাচারি থাকবে না, সকল জীবই ক্লেশ রহিত, মাৎসর্য্যশূন্য, দেবতা সদৃশ, সদানন্দময় হবে।


এছাড়াও শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের প্রকৃতি খণ্ড এবং মহাভারতের বন পর্বের বর্ণনা অনুযায়ী~

এরূপে সত্য যুগ আরম্ভ হলে অধর্মের নাশ ও ধর্মের বৃদ্ধি ও মনুষ্যগণ ক্রিয়াবাণ হয়ে ওঠবে। চতুর্দিকে উপবন, চৈত্য,তরাগ, আবাস স্থল, পুষ্করিণী ও দেবতা স্থান সমুদয় নির্মাণ এবং বিবিধ যজ্ঞ ক্রিয়া অনুষ্ঠান হবে। সর্বদাই ব্রাহ্মণ, সাধু ও তপষীগণ দৃষ্ট হবে। পূর্বে যে সমুদয় আশ্রমে কেবল পাষণ্ডগণকেই শুধু দেখা যেত এখন তার সবই সত্যপরায়ণ জনগণে পরিপূর্ণ হবে। চিরবদ্ধমূল কুসংস্কার সমুদয় প্রজাণের হৃদয় ক্ষেত্র হতে দূরীভূত হবে। সমুদয় ঋতুতেই সমুদয় সমুৎপন্ন হবে, মনুষ্যগণ দান,ব্রত ও নিয়মেই নিরত হবে। বিপ্রগণ জপ যজ্ঞ পরায়ণ ষট্ কর্ম নিরত ধর্মাভিলাষী ও সতত সন্তুষ্ট চিত্ত হবে। ক্ষত্রিয়গণ বিক্রমে রত হবেন। ভূপতিগণ ধর্ম সহকারে পৃথিবী পালন করবেন। বৈশ্যগণ ব্যবহার নিরত এবং শূদ্রগণ উক্ত বর্ণত্রয়ের শুশ্রুষা পরায়ণ হবে।

বিভিন্ন যুগের বৈশিষ্ট্যাবলি সম্বন্ধে শ্রীমদ্ভাগবতের দ্বাদশ স্কন্ধের তৃতীয় অধ্যায়ে বিষদ বিবরণ রয়েছে। 

সত্য যুগের বর্ণনায় অধ্যায়টির ১৮ ও ১৯নং শ্লোকে বলা হয়েছে ---

সত্য যুগের চার চরণ হল সত্য, দয়া, তপ ও দান। সত্য যুগের বিশেষত্ব এই যে, জনগণ নিষ্ঠা সহকারে ধর্ম পালনে তৎপর থাকেন। এখানে ধর্মই শ্রীভগবানের বাস্তব স্বরূপ। সত্য যুগের লোকেদের মধ্যে পরিতৃপ্তি ও দয়া ভাব থাকে। ব্যবহারে থাকেপূর্ণ সৌহার্দ্য, স্বভাবে তারা হন শান্ত। ইন্দ্রিয়াদি ও মন তাঁদের বশিভূত থাকে। সুখ, দুঃখ ও দন্দ্বে তাঁরা সমভাবে সহনশীল। সত্য যুগের অধিকাংশ নরনারী সমদৃষ্টি সম্পন্ন ও আত্মারাম হয়ে থাকেন। আর অন্যরা স্বরূপ স্থিতি অভ্যাসে তৎপর থাকেন।


শ্রীমদ্ভাগবতের দ্বাদশ স্কন্ধের তৃতীয় অধ্যায় ২৭নং শ্লোকে বলা হয়েছে ---

যখন মন, বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়গণ সৎ গুণাশ্রিত থেকে নিজ কর্মে যুক্ত থাকে তখনই জানবে যে সত্য যুগ এসেছে। সত্য গুণের প্রাধান্য কালে মানুষ জ্ঞান ও তপস্যাতে অধিক আকর্ষণ অনুভব করে থাকে।


উক্ত অধ্যায়েরই ৩০নং শ্লোকে বলা হয়েছে~

যখন মিথ্যা, কপটাচারীতা, তন্দ্রা, নিদ্রা, হিংসা, বিষাদ শোক, মোহ ও দীনতা আদির প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয় তখন তাকে তমোগুণ প্রধান কলি যুগ বলেই জানবে।


এবং তার পরবর্তী ৩১ নং শ্লোক  বলা হয়েছে --

দেশে, গ্রামে-গঞ্জে লুন্ঠনকারীদের প্রাধান্য ও প্রাচুর্য প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা যায়। ভন্ড ব্যাক্তিরা নিত্য নতুন মত প্রচার করে তাঁদের ইচ্ছা অনুসারে বেদের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে তাকে কলঙ্কিত করে ফেলে। রাজা নামধারী ব্যাক্তিরা অর্থাৎ শাসনকর্তারা প্রজাদের আয়ের বেশির ভাগটাই আত্মসাৎ করে তাঁদের শোষণ করতে থাকে এবং ব্রাহ্মণ নামধারী মানুষরা উদরপুর্তি ও জননেন্দ্রিয় পরিতৃপ্তিতে ব্যস্ত হয়ে পরে। 

 অর্থাৎ, পৃথিবীতে এই সময় সত্য যুগ নয় বরং ঘোর কলি যুগ চলছে, কলিযুগের আয়ু প্রায় ৪ লক্ষ ২৭ হাজার বছর বাকি রয়েছে এখনো।


কেউ কেউ বলতে পারেন, সত্য যুগ আসলে আজ থেকে দেড়-দুহাজার বছর আগেই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সময়ের প্রভাবে সেই যুগের সৎ গুণাবলি সমুহ ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে পরছে। তাই বর্তমান সময়ে পৃথিবীর এমন বেহাল দশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী বিষয়টা একেবারেই তা নয়। কারণ, শ্রীমদ্ভাগবতের তৃতীয় স্কন্ধের একাদশ অধ্যায়ের বর্ণনা অনুযায়ী, সত্য যুগের সময় সীমা হলো ১৭,২৮০০০ বছর। অর্থাৎ, সত্য যুগ যখন একবার প্রতিষ্ঠিত হবে তখন সেই যুগের সৎ গুণাবলি সমুহ পৃথিবীতে ১৭,২৮০০০ বছর ধরে বর্তমান থাকবে। এই শাস্ত্রীয় প্রমাণ গুলি আমাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছে যে, বিগত দেড়-দুহাজার বছরে পৃথিবীতে না তো ভগবান কল্কি ।।

হরেকৃষ্ণ 🥰🙏।।


You May Also Like : 

1. শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর? তিনি তো জন্ম গ্রহণ করেছিলেন? ঈশ্বরের কি জন্ম মৃত্যু থাকতে পারে?

2. ভগবান শব্দের অর্থ কি ? ভগবান আর ঈশ্বর কি এক ?

3. How can I make money using PayPal | Get free $50 in Paypal

4. Create your logo with professional logo designer

5. How to deactivate facebook account | fb account deactivate

6. Facebook video download without watermark | Facebook video downloader


Join Our Facebook Community:👇

༻ভক্তের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ༻꧂

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

༻হরেকৃষ্ণ꧂আপনার মতামত লেখুন--

নবীনতর পূর্বতন