চলুন জেনে নেয়া যাক সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্ম গ্রন্থ সমূহ কয়টি এবং কি কি?
![]() |
Sanatan Dharma —সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্ম গ্রন্থ সমূহ |
স্মৃতিসংহিতা, ইতিহাস, পুরাণ, আগম এবং ষড়-দর্শন।
এগুলি উল্লেখযোগ্য হিন্দুধর্ম গ্রন্থ বলে পরিচিত।
আরো পড়ুন একাদশী পালনের নিয়ম এবং পারণ মন্ত্র —একাদশীর দিন কি কি বর্জনীয়
সনাতন ধর্মের ধর্মগ্রন্থগুলো ২ ভাগে বিভক্ত-শ্রুতি ও স্মৃতি।
শ্রুতি হল বেদ(৪ টি),
বেদাঙ্গ(৬ টি),
বেদান্ত/উপনিষদ (১২টি)।
স্মৃতি ২ ভাগে বিভক্ত - সংহিতা ও পুরাণ।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলির দুটি ঐতিহাসিক শ্রেণীবিন্যাস হল: 'শ্রুতি' যার অর্থ শোনা হয়েছেত ও স্মৃতির যা মনে রাখা হয়েছে।শ্রতিশাস্ত্রগুলি সর্বোচ্চ প্রামাণিক ধর্মগ্রন্থ। এগুলি সেই প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ যেগুলিকে 'অপৌরুষেয়' (স্বয়ং ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত) মনে করা হয়। এগুলিই হিন্দুধর্মের কেন্দ্রীয় ধর্মগ্রন্থ।
নির্দিষ্ট লেখক কর্তৃক রচিত ধর্মগ্রন্থগুলি 'স্মৃতি' পর্যায়ভুক্ত। শ্রুতিশাস্ত্রের তুলনায় স্মৃতিশাস্ত্রের গুরুত্ব কম। স্মৃতিশাস্ত্র বৈচিত্র্যপূর্ণ এক বিশাল শাস্ত্র-সংকলন। বেদাঙ্গ, হিন্দু মহাকাব্য, ধর্মসূত্র, হিন্দু দর্শন, পুরাণ, কাব্য এই ধারার অন্তর্গত।
আগে হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলি মুখে মুখে রচিত হত ও মনে রাখা হত এবং মুখে মুখেই গুরুশিষ্য-পরম্পরায় এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রচলিত ছিল। এক সহস্রাব্দ পর এগুলি পাণ্ডুলিপি আকারে লিখিত হয়।] হিন্দুশাস্ত্র মুখে মুখে সংরক্ষণ ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রচলনের এই প্রথা আধুনিক যুগেও প্রচলিত আছে।
#১ আদি গ্রন্থ বেদ
বেদ হল প্রাচীন ভারতে লিপিবদ্ধ একাধিক গ্রন্থের একটি বৃহৎ সংকলন। ছান্দস্ ভাষায় রচিত বেদই ভারতীয় সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন এবং সনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। সনাতনীরা বেদকে "অপৌরুষেয়" ("পুরুষ বা লোক" দ্বারা কৃত নয়, অলৌকিক) এবং "নৈর্বক্তিক ও রচয়িতা-শূন্য" (যা সাকার নির্গুণ ঈশ্বর-সম্বন্ধীয় এবং যার কোনও রচয়িতা নেই) মনে করেন। আর্ষ শাস্ত্র অনুযায়ী পরব্রহ্মই সৃষ্টির আদিতে মানব হিতার্থে বেদের জ্ঞান প্রকাশ করেন। সর্বপ্রথম অগ্নি, বায়ু, আদিত্য ও অঙ্গিরা এই চার ঋষি চার বেদের জ্ঞান প্রাপ্ত হন। এবং পরবর্তিতে তাঁরা অন্যান্য ঋষিদের মাঝে সেই জ্ঞান প্রচার করেন এবং অলিপিবদ্ধভাবে পরাম্পরার মাধ্যমে তা সংরক্ষিত হয়ে এসেছে। আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী এই চার ঋষিকে শরীরধারী মানুষ বলেছেন। পুস্তক আকারে প্রাপ্ত বেদ আধুনিক হলেও এর জ্ঞানকে শাশ্বত বলে অনেক পণ্ডিতই স্বিকার করেন। পাশ্চাত্যের অনেক গবেষক ভাষাগত রচনাশৈলি, প্রত্নতাত্তিক প্রমাণাদির উপর নির্ভর করে বেদের রচনাকাল ১৫০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ হিসাবে ধারণা করেন। হিন্দুধর্মের প্রসিদ্ধশাস্ত্র গ্রন্থ বেদ । বেদের অপর নাম শ্রুতি।
বেদ চার প্রকার
যথা-
- ঋক্বেদ,
- সামবেদ,
- যজুর্বেদ এবং
- অথর্ববেদ।
ঋষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ বেদব্যাস এই বেদের বিভাগ কর্তা এবং তিনিই বেদকে শ্রৃতি থেকে পুস্তকে লিপিবদ্ধ করেছেন।
প্রত্যেক বেদের দুটি অংশ তা হলঃ
- সংহিতা (সংহিতায় আছে মন্ত্র) এবং
- ব্রাহ্মণ (ব্রাহ্মণে আছে তার অর্থ ও ব্যবহার)।
বেদে মোট মন্ত্র সংখ্যা ২০৩৭৯টি।
আরো পড়ুন সত্যি কি হযরত মুহাম্মদ সনাতন ধর্মের কল্কি অবতার?
#২ বেদাঙ্গ
বেদের মর্ম যথার্থভাবে উপলব্ধি করার জন্য বেদের ছয়খানা অবয়বগ্রন্থ অধ্যায়নের প্রয়োজন। এই অবয়ব গ্রন্থগুলিকে বলা হয় বেদাঙ্গ।
বেদাঙ্গ শাস্ত্রগুলো হলঃ
- শিক্ষা
- কল্প,
- ব্যাকরণ,
- নিরুক্ত,
- ছন্দ এবং
- জ্যোতিষ।
#৩ উপবেদ
মূল বেদের সহকারী গ্রন্থ বলে এদেরকে উপবেদ বলে। যথাঃ-
- আয়ুর্বেদ (ভেষজশাস্ত্র),
- ধনুর্বেদ (অস্ত্রবিদ্যা),
- গন্ধর্ববেদ (সঙ্গীত বিদ্যা) এবং
- স্থাপত্যবেদ (কৃষিবিদ্যা)
#৪ উপনিষদ
উপনিষদ হিন্দুধর্মের এক বিশেষ ধরনের ধর্মগ্রন্থের সমষ্টি । এই বইগুলিতে হিন্দুধর্মের তাত্ত্বিক ভিত্তিটি আলোচিত হয়েছে । উপনিষদ্গুলিতে সর্বোচ্চ সত্য স্রষ্টা বা ব্রহ্মের প্রকৃতি এবং মানুষের মোক্ষ বা আধ্যাত্মিক মুক্তি লাভের উপায় বর্ণিত হয়েছে । উপনিষদ্গুলি মূলত বেদ-পরবর্তী ব্রাহ্মণ ও আরণ্যক অংশের শেষ অংশে পাওয়া যায় । এগুলি প্রাচীনকালে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। উপনিষদ হল বেদের সারাংশ তাই একে বেদান্তও বলা হয়। উপনিষদের সংখ্যা অনেক। বর্তমানে ১১২ খানা উপনিষদের নাম জানা গেছে। এ ১১২ খানা উপনিষদের মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য হলঃ
- বৃহদারণ্যক,
- শ্বেতাশ্বতরো,
- ছান্দোগ্য,
- ঐতরেয়,
- তৈত্তিরীয়,
- ঈশ,
- কেন,
- কঠ,
- প্রশ্ন,
- মন্ডুক এবং
- মান্ডুক্য প্রভৃতি।
#৬ স্মৃতি-সংহিতা
যা যা স্মৃত হয়েছে তাই স্মৃতি। স্মৃতি শব্দের অর্থ স্মরণ। স্মৃতি-সংহিতা পাঠ করে হিন্দুরা জানতে পারে মানুষের ধর্ম-কর্ম কি। আমাদের বিশখানা স্মৃতি-সংহিতা রয়েছে। এদের মধ্যে তিনখানা স্মৃতি-সংহিতা প্রধান ও প্রসিদ্ধ। তা হলঃ
- মুন-স্মৃতি,
- যাজ্ঞবল্ক-স্মৃতি এবং
- পরাশর-স্মৃতি।
#৭ মহাভারত ও রামায়ণঃ
#৮ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা
#৯ পুরাণ
- সর্গ,
- প্রতিসর্গ,
- বংশ,
- মন্বন্তর এবং
- বংশানুচরিত।
- মহাপুরাণ এবং
- উপপুরাণ।
#১০ মহাপুরাণ
- বিষ্ণুপুরাণ,
- পদ্মপুরাণ,
- বায়ুপুরাণ,
- স্কদ্ধপুরাণ,
- মার্কন্ডেয়পুরাণ এবং
- ভাগবত পুরাণ প্রভৃতি।
#১১ ভাগবতপুরাণ
- দেবী ভাগবত (শ্রীদুর্গার শক্তি ও মাহাত্ম্য বর্ণিত) এবং
- শ্রীমদ্ভাগবত বা বিষ্ণু ভাগবত (শ্রীকৃষ্ণের শক্তি ও মাহাত্ম্য বর্ণিত)।
#১২ উপপুরাণ
- আদি,
- নৃসিংহ,
- বায়ু,
- শিবধর্ম,
- দুর্বাসঃ,
- বৃহন্নারদীয়,
- নন্দিকেশ্বর,
- উশনঃ,
- কপিল,
- বরুণ,
- শাম্ব (এটি যাচাই করে নিবেন)
- কালিকা,
- মহেশ্বর,
- দেবী,
- ভার্গব,
- বশিষ্ট
- পরাশর এবং
- সূর্য ইত্যাদি।
#১৩ চন্ডি
#১৪ আগম শাস্ত্র
- শৈব,
- বৈষ্ণব এবং
- শাক্ত।
#১৫ ষড়দর্শন
- সাংখ্য-দর্শন,
- যোগ-দর্শন,
- ন্যায়,
- বৈশেষিক,
- পূর্ব-মীমাংসা, এবং
- উত্তর-মীমাংসা বা বেদান্ত-দর্শন।